আজ ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ছন্দার রহস্যজনক মৃত্যু /মোঃ জিয়াউর রহমান

সাহিত্য/স্বরচিত গল্প 

 

 

ভাবছি মানবতা ধর্মী একটি প্রতিষ্ঠান খুলব,নাম হবে রোগ বিক্রয় এবং যাতনা নিরাময় কেন্দ্র।

যে প্রতিষ্ঠানের কাজ হবে কঠিন রোগ,অভাব, নানান ধরনের যাতনা,বার্ধক্য সহ সবকিছু___
কিছু সময়ের জন্য অন্য সুস্থ সামর্থ লোকের দেহে স্থানান্তর করা যাবে।তার বিনিময়ে টাকা প্রদান করবে যে এসব যাতনা বহন করবে।

টাকা গুলো রিক্স ভাতা হিসেবে প্রদান হবে,তা আবার নির্দিষ্ট সময় পর এমনিতেই সঠিক দেহে পৌঁছে যাবে।
তাতে কিছু মানুষের বেকারত্ব দূর হবে,বার্ধক্যে পতিত কোন ব্যাক্তি কোন তরুণের কাছে অসার দেহটা বিক্রয় করবে ঘন্টা খানেকের জন্য।

তরুণ অসার দেহ বহন করবে ঘরে অচল হয়ে আর বার্ধক্যের ব্যাক্তিটি এক ঘন্টার তারুণ্যতা নিয়ে ইচ্ছে মত ফূর্তি করবে।তবে এর ভেতরে বার্ধক্যের মৃত্যু চলে আসতে পারবে, তাতে সেই শক্তি তরুণের কাছে ফিরে যাবে।

সকল মানসিক যাতনা এ রোগ বিক্রয় কেন্দ্র সাময়িক ভাবে মুক্তি দেবে।ইহাতে অনেক কর্মসংস্থানের পথ বের হবে।

নির্দিষ্ট সীমার পৃথিবী এক সময় মানব দ্বারা ভরে উঠবে আর অন্যান্য অবলা সকল প্রাণী মানব খাদকের বাসস্থান এবং খাবার দরকারে বিলীন হতে থাকবে।
তাতে করে একদিন পৃথিবী ইট পাথরের পড়ত ভূমিতে পরিণত হবে।

তাই সৃষ্টির পূর্ব থেকেই পরিবার পরিকল্পনার কথা বলা হচ্ছে,কথায় কি আর কাজ হয়।

কোরআন শরীফের পরিবর্তন আর মানুষ জন্ম নিয়ন্ত্রণ এই দুটি কখনোই সম্ভব নয়।
মানুষ বাঁচলে কোরাআন বাঁচবে আর পৃথিবীর চাষ হবে।

সেই জন্ম উপর ভিত্তি করে ঘরে ঘরে একটি সন্তান বা দুটি এভাবে সংসার ছোট হচ্ছে,এভাবে কোন কোন বংশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মরা খালা ,মামা,চাচা, ফুফু এগুলো পাবেনা।

এসব বংশ বিলীনের কেহ মারা যাবার আগে আমাদের যাতনা নিরাময় কেন্দ্রে এসে কর্মচারি কে টাকা দিয়ে বলবে আমার মারা যাবার পর কেউতো নাই, আপনি আমার জন্য কেঁদে দেবেন,বিলীন হওয়া বংশের জমি,সম্পদ আবার দেশের কাছে হস্থান্তর হবে।

তখন একটি পরিবর্তন আবার আসবে,মানুষ সামাজিক জীব,একা বসবাস করা অসম্ভব তাই আবার রক্ত পরিচয় ছাড়াও পড়শির সাথে ভালো সম্পর্ক হবে রক্তের মতো
যাহাতে একে অপরের পারিবারিক সম্পর্কের মতো হবে।

মানুষ মারা গেলে কবর দেয়ার জন্য কিছু সংগঠন থাকবে সেটাও রোগ স্থানান্তর কেন্দ্রের কাজ হবে,
অনেক অনেক বৃদ্ধাশ্রম হবে,কারণ বার্ধক্য মানে অচল সেই অচল দেহ বহনের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান কাজ করবে তাতেও অনেক কর্মসংস্থান বের হবে।

শিশু কেয়ার সেন্টার খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পরবে কারণ নারী পুরুষ উভয়ই চাকরি করে সন্তান বহনে অক্ষম হবে।

মানুষের মৃত্যু হলে এই সংগঠন দর কষাকষি করবে,কত টাকাতে তার অন্তিম কাজ করা হবে,তবে এতে পড়শিরা আরো আন্তরিক হবে কারণ সবাই যখন জানবে সে মারা গেলেও একই একটি সমস্যা দেখা দেবে।

তবে মারা গেলে কবর দেয়ার সিস্টেমে সবচেয়ে সুবিধা হলো তাতে খরচ এবং সময় দুটিই কম লাগে,
পরিবেশও দুষিত হয়না, একই স্থানে কয়েক বছর পর আবারো কবর দেয়া যায়।

পাশের বাড়ির বিক্রম চাচার বউটা সেদিন মারা গেল,বৃষ্টি ছিলো সুন্দর করে তাকে মাটি দিয়ে চলে এলো।
বাড়িতে নীরব পরিবেশ, বেশ কদিন জটিল রোগে ভোগে মৃতের অমরত্ব লাভ করেছে যে জিন্দেগির শুরু আছে শেষ নেই।

আমার রোগ স্থানান্তরের প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করতে পারিনি,নাহলে ক্যান্সারের ভয়াবহ যন্ত্রণা থেকে কিছু সময় শান্তি দেয়া যেত।

কি আর করা বিক্রমের বউ মরাতে কপাল ভাঙলো কন্যা ছন্দার আর খুশিতে বিক্রম মিয়া, নয়া বউ আসবে ঘরে।

কন্যা ছন্দার বয়স এখন চোদ্দ, যখন তার জন্ম হয়েছে কত আদরে ছিলো মেয়েটি।

ছন্দার পিতা আবার বিয়ে করলো,আসলে বউ মারা গেলে স্বামী মানে পুরুষ জাতি একা চলতে অক্ষম, কিন্তু মহিলারা পুরুষ ছাড়া একা চলায় সক্ষম কারণ তারা রান্না নামক একঘেয়েমি কঠিন কাজটি করে নিজেকে সচল রাখে আর রুটিন মত খায় রোদে কম যায় তাই তারা পুরুষ মারাগেলে টাকা কিছু থাকলে তাদের চলার অসুবিধা কম হয়।

কথা আছে মা মারা গেলে বাপ নাকি তালই হয়,ছন্দার মা এ সংসারে প্রবেশ করলো, আর তার ভেতরে যেন কেউ তীর দিয়ে খোঁচাচ্ছে আগের ঘরের একটা মেয়ে আছে,এই পথের কাঁটা কিভাবে সরানো যায়।

ছন্দা যেখানে তার মায়ের সোনার আঁচলে দোল খেত সেখান থেকে তাকে এখন সরাসরি মাটিতে ফেলে দেয়া হয়েছে।

নতুন বধু সুরমা বেগমের কথায়, পুরুষ বিক্রমেরা নতুন বধুর চুম্বক যৌবন অঙ্গের কাছে অদৃশ্য গোলাম রূপে আটকে যায়।

মেয়েটি কে সারাক্ষণ কাজ করায়, ঝুটা খাবার দেয় যেখানে ছন্দার খাবারেই ছিল ভিন্ন, যে কোন খাবার খেতো না।

ছন্দা কিছুটা রাগি প্রকৃতির, তার বাবা সব বায়না পুরন করতো,কিন্তু সব দেখেও বিক্রম অন্য ধাতুর পুরুষে পরিণত হয়েছে।

ঘরে ঝগড়া লেগেই থাকে,নানা কারণে ছন্দার গায়ে হাত উঠে বাবার সামনে, সব যাতনা সয়ে ছন্দা কেমন কঠিন হয়ে গেছে।

অবশেষে কঠিন আত্মার রূপ নিয়ে সে নিজ বাড়ি থেকে বের হলো যেটা তার প্রিয় জন্ম ভূমি ছিল ।সুরমার বেগমের আশা পুরন হলো।

ছন্দা এখন পনেরো প্লাস, গায়ের রঙটা কালো কিন্তু চেহারায় একটা চমকপ্রদ লাবণ্য, যা দেখে যে কোন পুরুষ নয় নারীর চোখেও দৃষ্টি কাড়বে।

সে সমাজের চোখে লোভের পাত্র।
একটি প্রতিষ্ঠানের সিঁড়ির নীচে কাঞ্চন শহরে রাত যাপন করে যা তার প্রথম রাত।কোন ভাবে সময় কেটে যাচ্ছে আর প্রতিষ্ঠানের সকল মানুষ আর আসা যাওয়া সকলের লোভের কেন্দ্র বিন্দু ছন্দা।

তাকে এখান থেকে সরে যাবার জন্য অনেক চাপ দেয়া হয়,সে কোথাও যায়না দিনের বেলায় যেখানে থাকে তার আশে পাশে বিচরণ করে,পুরুষ পথচারীরা তাকে পারলে গিলে খায়।

কিছুদিন যেতেই পরিবর্তন চোখে পরে ছন্দার গায়ে আধুনিক পোষাক তাতে আরো আকর্ষণীয় লাগে, তবে কথা হলো এসব পোষাক কোথায় পেলো।

আসলে পেট যখন পিঠেতে লাগে তখন মাছ বড়শির টোপ গিলে,আর তার যৌবন তরঙ্গও তাকে আঘাত করে টাকার বিনিময়ে ছন্দা তার ভার্জিন দেহ নষ্ট করে।

কত আর খুলামেলা থেকে, না খেয়ে চারপাশে ঘুরা হায়েনারের হাত থেকে মুক্তি পাবে,মাথা নত করতেই হল অল্প বয়সী ছন্দাকে আর পেছনে ফেরার সময় নেই।
হয়তো প্রতি রাতেই বিক্রি হয়,সাথে নেশা ধরে ছেলেদের সাথে উঠাবসা দিবারাত্রি।

হঠাৎ ছন্দা গর্ভবতী হয়ে যায়,স্বীকৃতি ছাড়া আরেক এলিয়েন আসছে যে ছন্দার নিজের মাথা গোজার ঠাঁই নাই। আমার যাতনা নিরাময় কেন্দ্রটা সচল হলে ছন্দাকে কিছু মুক্তি দেয়া যেত।

ছন্দা একজনের সাথে সমঝোতা করে তার পিতা পরিচয়হীন শিশুকে দিয়ে দেয়।আবারো উশৃংখল জীবন চলে আর বাবা বিক্রম নতুন বারুদ সুরমা কে নিয়ে আনন্দে।

ছন্দার চেহারা এতোটা আকর্ষণ ছিলো,কিন্ত জংলী ফুলে রুপান্তর হলো,যে কেউ তাকে বিয়ে করতে পারতো যে রূপ ছিলো।

হঠাৎ এক সকালে খবর আসে এক নালায় তাকে উল্টে মাথা কাদায় ঢুকিয়ে রেখেছে।জলন্ত ছন্দার জীবনের অবসান হলো।

যার কেউ নেই সমাজে খুলামেলা ঘুরতো তার মারা যাওয়াতে কার্ কি আসে যায়, সমাজও মুক্তি পেলো আর ছন্দাও যৌবন ভরা দেহ থেকে চিরমুক্তি পেলো।

আইন আদালতের কি আর লাভ অজানা লোকের ন্যায় দেবে,জানা লোকেদের ন্যায়ের খুব মন্দা চলছে সমাজে।

আর সাক্ষী রূপে বেঁচে রইলো যারা যারা ছন্দার রাতের রাজা ছিল আর যাদের দুষে তাকে কলঙ্কিত হতে হলো।

তারা কি মুক্তি পাবে নিজের আত্মার কাছে যারা তার সাথে সুযোগে পলিথিনের মত ব্যবহার করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category